বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সার্কুলার ও নোটিশ ২০২৫। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না, যা তাদের জন্য অনেক সুবিধা।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম, যোগ্যতা, পরীক্ষার সময়সূচী এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন, গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা, গুচ্ছে পাস ওয়ার্ক কত? গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কত পয়েন্ট লাগে? এ সকল বিষয় নিয়ে আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেল তুলে ধরব। তাই আসা করছি প্রথম থেকে আর্টিকেল টি মনোযোগ দিয়ে পরবেন।
গুচ্ছ কি ও গুচ্ছ কাকে বলে ?
“গুচ্ছ” শব্দটি বাংলা ভাষায় সাধারণত “গ্রুপ” বা “সমষ্টি” বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষা বা ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে, গুচ্ছ মানে হলো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একত্রিত করে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা:
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হলো একটি সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতি যেখানে শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। এটি ২০২০ সালে বাংলাদেশে চালু হয়। এই ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো:
পরীক্ষার সহজতা: শিক্ষার্থীরা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে একাধিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। গুচ্ছ পরীক্ষায় শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এই কাজটি সম্পন্ন হয়।
সময় ও খরচের সাশ্রয়: একাধিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য সময় এবং অর্থ ব্যয় হয়। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সেই সময় ও খরচ বাঁচাতে পারে।
নির্বাচনের সুযোগ: পরীক্ষায় ভালো ফল করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়, যা তাদের ক্যারিয়ারের জন্য সহায়ক হতে পারে।
গুচ্ছ কাকে বলে?
গুচ্ছ বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে যারা এই ভর্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এই পরীক্ষায় যুক্ত হয়, তবে তারা collectively গুচ্ছ তৈরি করে। শিক্ষার্থীরা এই গুচ্ছের অধীনে একটি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে।
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্কুলার ২০২৫ কবে?
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় সার্কুলার ২০২৫ কবে দিবে?
শিক্ষাবর্ষ ২০২৩-২০২৪ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে। তাই এখন পর্যন্ত গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৫ সার্কুলার কোন দিন বা কত তারিখ হতে পারে সেটা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ধারণা করা যাচ্ছে যে ডিসেম্বরের মাঝা মাঝি এ নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সম্ভবত ভর্তি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে অথবা মার্চের প্রথম সপ্তাহে গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। তাই আপনাদেরকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় সার্কুলার প্রকাশ করার পরে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দিব তাই আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সমূহ
১। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
২। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)
৩। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)
৪। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি)
৫। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
৬। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)
৭। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)
৮। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় (রবি)
৯। শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়
১০। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)
১১। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)
১২। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি)
১৩। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)
১৪। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)
১৫। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)
১৬। রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৭। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়
১৮। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৯। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ
২০। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২১। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২২। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা ২০২৫
প্রতিটি বিভাগে অংশগ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা নির্ধারিত আছে। এই যোগ্যতাগুলো পূরণ না করলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সার্কুলার ও নোটিশ ২০২৫ অনুসারে, A, B, এবং C ইউনিটের জন্য আলাদা আলাদা যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিচে সেই যোগ্যতাগুলোর বিস্তারিত দেওয়া হলো:
A ইউনিট ( বিজ্ঞান ভিভাগ)
- এসএসসি এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৮.০০।
- উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩.৫০ জিপিএ থাকতে হবে।
B ইউনিট (মানবিক বিভাগ)
- এসএসসি এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৬.০০।
- উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩.০০ জিপিএ থাকতে হবে।
C ইউনিট (বাণিজ্য বিভাগ)
- এসএসসি এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৬.৫০।
- উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩.৫০ জিপিএ থাকতে হবে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মানবণ্টন সকল ইউনিট
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি ইউনিটে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নপত্র থাকবে। পরীক্ষার সময়সীমা ৬০ মিনিট/ ১ ঘণ্টা। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ এবং ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হবে। ইউনিটভেদে মানবন্টনের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সাধারণত প্রতিটি ইউনিটের জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন করা হবে।
ক ইউনিট (বিজ্ঞান বিভাগ)
- পদার্থবিজ্ঞান: ২৫ নম্বর
- রসায়ন: ২৫ নম্বর
- গণিত/জীববিজ্ঞান: ২৫ নম্বর০
- বাংলা/ইংরেজি: ২৫ নম্বর
খ ইউনিট (মানবিক বিভাগ)
- বাংলা: ৩৫ নম্বর
- ইংরেজি: ৩৫ নম্বর
- সাধারণ জ্ঞান: ৩০ নম্বর
গ ইউনিট (বাণিজ্য বিভাগ)
- বাংলা: ১৫ নম্বর
- ইংরেজি: ১৫ নম্বর
- হিসাববিজ্ঞান: ৩৫ নম্বর
- ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা: ৩৫ নম্বর
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দেখে নিন –
গুচ্ছে আবেদন করতে কত টাকা লাগে?
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ফি হলো ৫০০ টাকা। এই ফি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা করে প্রদান করতে হবে, অর্থাৎ গুচ্ছভুক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন করার জন্য ৫০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।
গুচ্ছে সিটের সংখ্যা কত ?
মোট আসন সংখ্যা: ২৩,৫০০ আসন এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় উপলব্ধ থাকবে, যা বিভিন্ন বিভাগ ও কোর্সে ভাগ করা হবে। এই আসন সংখ্যা পুরো দেশের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।
গুচ্ছ পাস মার্ক কত?
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় পাস মার্ক প্রায় ৪০%। শিক্ষার্থীদের জন্য এই মান অর্জন করা জরুরি, যাতে তারা ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। পরীক্ষার সঠিক নিয়মাবলী এবং পাস মার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল সার্কুলার বা ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এই তালিকা এবং র্যাংকিং শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে সহায়ক। বিস্তারিত তথ্যের জন্য অফিসিয়াল সার্কুলার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নজর দেওয়া উচিত।