আপনি কি অগ্রণী ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চান কিন্তু অগ্রাণী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার সঠিক নিয়ম জানেন না? তাহলে আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেল টি তে আমরা কিভাবে ঘরে বসে অগ্রাণী ব্যাংকে আকাউন্ট খোলবেন তা স্টেপ বাই স্টেপ বিস্তারিত আলচনা করবো।
অগ্রণী ব্যাংক বাংলাদেশের প্রথম এবং বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে তাদের নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া, একাউন্ট খোলার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টও প্রয়োজন হবে। এই ডকুমেন্টগুলো কী কী, তা জানার জন্য আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
তো চলুন, অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার বিস্তারিত নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক
অগ্রাণী ব্যাংক
অগ্রণী ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন একটি প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। এটি দেশের প্রথম এবং বৃহত্তম সরকারি ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অগ্রণী ব্যাংক এর বিভিন্ন সেবা যেমন- সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ, আন্তর্জাতিক লেনদেনসহ আরো অনেক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে।
এছাড়া, অগ্রণী ব্যাংকটি বর্তমানে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাও প্রদান করছে, যার মাধ্যমে গ্রাহকরা মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং এটিএম সেবার মাধ্যমে সহজেই তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।
অগ্রাণী ব্যাংকে আকাউন্ট খোলার নিয়ম
অগ্রণী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হলো, ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে একাউন্ট খুলে, আর অন্যটি হলো অনলাইনে Agrani eAccount অ্যাপ ব্যবহার করে।
যদি আপনি শাখায় গিয়ে একাউন্ট খুলতে চান, তাহলে আপনাকে কিছু ডকুমেন্ট সাথে নিয়ে যেতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ১।পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ২জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- ৩।নমিনির ছবি।
- ৪। নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
এই ডকুমেন্টগুলোসহ আবেদন ফরমটি জমা দিয়ে আপনি আপনার একাউন্টটি খুলতে পারবেন।
অগ্রণী ব্যাংকে একাউন্ট কত প্রকার ?
অগ্রণী ব্যাংকে আমরা মূলত ০৩ ধরনের একাউন্ট তৈরি করতে পারবো। এগুলো হচ্ছে —
- ১। সঞ্চয়ী একাউন্ট (Savings Account)
- ২। চলতি একাউন্ট (Current Account)
- ৩। স্টুডেন্ট একাউন্ট(Student Account )
১। সঞ্চয়ী হিসাব (Saving Account): সাধারণ গ্রাহকদের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত একাউন্ট, যেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রেখে সুদ উপার্জন করা যায়। এটি সাধারণত ব্যক্তিগত সঞ্চয় বা ছোটখাটো জমার জন্য ব্যবহৃত হয়।
২। চলতি হিসাব (Current Account): ব্যবসায়ীদের জন্য উপযুক্ত একাউন্ট, যেখানে দৈনিক লেনদেন করা যায়। চলতি হিসাবের মধ্যে সুদ নেই, তবে এটি বড় অংকের জমার জন্য উপযুক্ত এবং যে কোনো সময় টাকা উত্তোলন করা যায়।
৩। স্টুডেন্ট একাউন্ট (Student Account): শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি বিশেষ একাউন্ট, যেখানে তাদের পড়াশোনার খরচ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় লেনদেন সহজে করা যায়। এটি সাধারণত নূন্যতম জমার মাধ্যমে খোলা যায়।
আরো পড়ুন-
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও সুবিধা
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে
একাউন্ট খোলার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়। সাধারণত নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলো জমা দিতে হয়:
- ১।জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা পাসপোর্ট।
- ২।পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সম্প্রতি তোলা)
- ৩। প্রমাণপত্র (যেমন: বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানির বিল) আপনার স্থায়ী ঠিকানা নিশ্চিত করার জন্য
- ৪। জন্মসনদ (যদি বয়স কম হয় বা পরিচয়পত্র না থাকে)
- ৪। প্রফেশনাল ডকুমেন্ট (যেমন: চাকরির পরিচয়পত্র, ব্যবসায়ীক লাইসেন্স) (কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)
- ৫। পিন নম্বর (PIN Number) (এটিএম কার্ডের জন্য)
- ৬। নমিনির পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি
- ৭। নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- ৮। ন্যুনতম পরিমাণ টাকা জমা রাখা
- ৯। ইউটিলিটি বিলের কপি
- ১০। স্টুডেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড
অগ্রণী ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চাইলে আপনাকে উপরোক্ত কাগজপত্র গুলো প্রয়োজন হবে। এই কাগজপত্রগুলো অনলাইনে অগ্রাণী ই একাউন্ট অ্যাপের মাধ্যমে একাউন্ট খোলার সময়ও জমা দিতে হবে। যদি আপনি অনলাইনে একাউন্ট খুলে থাকেন, তবে পরে ব্যাংকের শাখায় গিয়ে KYC (Know Your Customer) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
অনলাইনে অগ্রণী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম
আপনি সহজেই অনলাইনে Agrani eAccount অ্যাপ ব্যবহার করে সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারেন। অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরে গিয়ে Agrani eAccount সার্চ করে অ্যাপটি ইনস্টল করুন। ইনস্টল করার পর, নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
১/ মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করুন
অগ্রাণী ই একাউন্ট অ্যাপটি ইনস্টল করার পর ওপেন করে নিবেন এবং ভাষা সিলেক্ট করে নিবেন। এরপর, Savings Account সিলেক্ট করে আপনার মোবাইল নাম্বার দিবেন। মোবাইল নাম্বারে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে, সেটি বসিয়ে দিয়ে মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করে নিবেন।
২/ ভোটার আইডি কার্ড ভেরিফাই করুন
মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই হয়ে যাওয়ার পর এই ধাপে আপনার কাছে ভোটার আইডি কার্ডের ছবি চাইবে। ক্যামেরা ওপেন হয়ে যাবে অ্যাপের ভিতর থেকেই। এরপর, ক্যামেরা দিয়ে আপনার বা আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ডের স্যামন দিকের এবং পিছন দিকের ছবি তুলতে হবে।
এরপর, আবারও এন্টার করতে হবে। এরপর নিচের ধাপটি অনুসরণ করুন।
৩/ আবেদনকারীর ছবি আপলোড করুন
ভোটার আইডি কার্ডের ছবি আপলোড করার পর আবেদনকারীর ছবি চাইবে। ক্যামেরা অন করে আবেদনকারীর একটি সেলফি তুলবেন। ছবির ব্যাকগ্র্যান্ড সাদা রাখার চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ, কোনো দেয়ালের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে ছবি তুলবেন। এরপর, ছবিটি আপলোড করে দিবেন।
৪/ আবেদনকারীর তথ্য প্রদান করুন
পরবর্তী ধাপে আসলে আবেদনকারীর সকল তথ্য শো করাবে। ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য অনুযায়ী এখানে সকল তথ্য দেখতে পারবেন। যদি কোনো তথ্যে ভুল থাকে, তবে সেগুলো শুদ্ধ করে দিবেন। এরপর, আবারও পরবর্তী ধাপে যেতে Next বাটনে ক্লিক করবেন।
৫/ নমিনির তথ্য প্রদান করুন
এবার যে ব্যক্তিকে আপনার ব্যাংক একাউন্টের নমিনি রাখতে চান, তার ছবি তুলে আপলোড করুন এবং উক্ত নমিনির কোন ডকুমেন্ট আপলোড করতে চান সেটি সিলেক্ট করুন। ভোটার আইডি কার্ড আপলোড করতে চাইলে ভোটার আইডি কার্ড সিলেক্ট করুন এবং ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তুলে আপলোড করুন।
৬/ ব্রাঞ্চ এবং অন্যান্য তথ্য প্রদান করুন
বিভাগ, জেলা এবং ব্রাঞ্চের নাম সিলেক্ট করুন। আপনার পেশা এবং আয়ের মাধ্যম সিলেক্ট করুন। বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা চাইলে তা লিখুন এবং ই-মেইল অ্যাড্রেস লিখুন। এরপর, আপনার চেকবুক লাগলে চেকবুক এর ঘরে টিকমার্ক দিন এবং ATM কার্ড প্রয়োজন হলে তাতে টিকমার্ক দিন। এরপর, আবারও Next বাটনে ক্লিক করুন।
৭/ প্রদানকৃত সকল তথ্য যাচাই করুন
এতক্ষণ যাবত যেসব তথ্য প্রদান করেছেন, সকল তথ্য ধীরে ধীরে যাচাই করুন। কোনো তথ্যে ভুল থাকলে সেগুলো সংশোধন করে নিন। এরপর, সবকিছু ঠিক থাকলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করার পর আপনার দেয়া তথ্য সঠিক হলে আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি এসএমএস আসবে। অভিনন্দন এসএমএস আসলে বুঝতে হবে আপনার ব্যাংক একাউন্ট খোলা সম্পন্ন হয়েছে।
এরপর, আপনার নিকটস্থ যেকোনো শাখায় গিয়ে KYC প্রদান করতে হবে। অনলাইনে ব্যাংক একাউন্ট খুললে অবশ্যই KYC প্রদান করতে হবে ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে। এরপর, আপনি নিশ্চিন্তে আপনার ব্যাংক একাউন্ট হিসেব দিয়ে লেনদেন করতে পারবেন।
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট চেক করার নিয়ম
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট চেক করার জন্য এটিএম কার্ড বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়াও, অগ্রণী ব্যাংকের যেকোনো নিকটস্থ শাখায় গিয়েও অগ্রণী ব্যাংকের ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন।
অগ্রাণী ব্যাংক সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
অগ্রণী ব্যাংকের পূর্ব নাম কি ছিল?
অগ্রণী ব্যাংকের পূর্ব নাম ছিল ২টি
১. দি হাবিব ব্যাংক লিমিটেড
২. দি কমার্স ব্যাংক লিমিটেড।
অগ্রণী ব্যাংক কি অনলাইন ব্যাংকিং?
এখন থেকে অগ্রণী ব্যাংকের গ্রাহকগণ ঘরে বসেই অনলাইন “এ চালান” পদ্ধতিতে চালানের অর্থ জমা দিতে পারবেন। সেবাটি পেতে এখানে ক্লিক করুন। *** অগ্রণী স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করুন এবং ঘরে বসে বা যে কোন স্থান থেকে দিবারাত্রী ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকিং করুন।
অগ্রণী ব্যাংকের সুইফট কোড কত?
SWIFT was founded in Brussels, Belgium in 1973, supported by 239 banks in 15 countries. Agrani Bank Limited is a member of SWIFT. SWIFT code is AGBKBDDH.
অগ্রণী ব্যাংক কি ধরনের?
অগ্রণী ব্যাংক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (এবিপিএলসি) বাংলাদেশের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক।
অগ্রণী ব্যাংকের বর্তমান নাম কি?
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের নাম পরিবর্তন হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকটির নাম হবে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি করার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়।