বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশে নিয়োগপ্রাপ্ত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের শূন্য পদের বিপরীতে বদলি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এ প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়। একই সঙ্গে গত আগস্ট মাসে জারি করা নীতিমালাটি বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে, বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) শূন্য পদের বিপরীতে বদলির প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আন্দোলনে নামেন এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। পরে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বদলির সাধারণ শর্তগুলো হলো:
১. শূন্য পদের তথ্য প্রকাশ: এনটিআরসিএ প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শূন্য পদের বিবরণ অনলাইনে প্রকাশ করবে।
২. আবেদন প্রক্রিয়া: মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রকাশিত শূন্য পদের বিপরীতে বদলির আবেদন আহ্বান করবে। আবেদনকারীরা ১ থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
৩. বদলির আদেশ ও যোগদান: ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বদলির আদেশ জারি করা হবে এবং ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান সম্পন্ন করতে হবে।
৪. বদলির জেলা পছন্দ: আবেদনকারী তার চাকরির আবেদনে উল্লেখিত নিজ জেলায় বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন। যদি নিজ জেলায় পদ শূন্য না থাকে, তাহলে নিজ বিভাগের অন্য কোনো জেলায় বিদ্যমান শূন্য পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৫. যোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা:
- প্রথম যোগদানের পর চাকরিতে দুই বছর পূর্ণ হলে বদলির জন্য আবেদন করা যাবে।
- বদলি হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পর কমপক্ষে দুই বছর কাজ করার পর আবার বদলির জন্য আবেদন করা যাবে।
- একজন শিক্ষক কর্মজীবনে সর্বোচ্চ দুইবার এবং একজন শিক্ষিকা সর্বোচ্চ তিনবার বদলির সুযোগ পাবেন।
৬. বদলির প্রাধান্য:
- একটি শূন্য পদের জন্য একাধিক আবেদন পাওয়া গেলে জ্যেষ্ঠতা, নারী এবং দূরত্বের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে।
- চাকরিতে প্রথম যোগদানের তারিখ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে।
- একই উপজেলার কর্মস্থলের ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে দূরত্ব নির্ধারণ করে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বদলির শর্ত ও প্রক্রিয়া:
১. দূরত্বের ভিত্তিতে প্রাধান্য:
- একটি শূন্য পদের জন্য প্রতিযোগী আবেদনকারীরা বিভিন্ন উপজেলার হলে, তাদের কর্মস্থল জেলার কেন্দ্র থেকে কাঙ্ক্ষিত জেলার কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্ব বিবেচনায় বদলি অনুমোদন করা হবে।
- যদি আবেদনকারীরা বিভিন্ন জেলার হন, তবে তাদের নিজ জেলার কেন্দ্র থেকে কাঙ্ক্ষিত জেলার কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্ব পরিমাপ করা হবে।
- দূরত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মডেল অনুসরণ করা হবে।
২. তথ্যের সঠিকতা:
- অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্যযুক্ত আবেদন বিবেচনায় নেওয়া হবে না।
- ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য প্রদান প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩. বদলি পরবর্তী প্রক্রিয়া:
- বদলির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর এনটিআরসিএ অবশিষ্ট শূন্য পদের জন্য নিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্ত করবে।
৪. প্রযুক্তি-নির্ভর প্রক্রিয়া:
- বদলির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
- মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সফটওয়্যার তৈরি ও অনলাইন আবেদন ফরম্যাট নির্ধারণ করবে।
- বদলিকৃত শিক্ষকের ইনডেক্স তথ্য অনলাইনে পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হবে।
৫. আর্থিক সুবিধা ও জ্যেষ্ঠতা:
- বদলিকৃত শিক্ষকের এমপিও ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পূর্বের মতো বজায় থাকবে।
- জ্যেষ্ঠতার ধারাবাহিকতাও অক্ষুণ্ণ থাকবে।
বদলির অতিরিক্ত নিয়মাবলি:
১. বদলির আবেদন সংক্রান্ত নিয়ম:
- বদলির আবেদনকে শিক্ষক বা শিক্ষিকার অধিকার হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কার্যকর হবে।
২. টিএ/ডিএ ভাতা:
- বদলিকৃত শিক্ষক কোনো ধরনের টিএ (ভ্রমণ ভাতা) বা ডিএ (দৈনিক ভাতা) পাওয়ার জন্য যোগ্য হবেন না।
- অবমুক্তি প্রক্রিয়া:
- বদলির আদেশ জারির পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বদলিকৃত শিক্ষকের অবমুক্তি নিশ্চিত করবেন।
- যোগদান সময়সীমা:
- অবমুক্তি হওয়ার পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে।
- যোগদানের তথ্য নিশ্চিতকরণ:
- নতুন কর্মস্থলে যোগদান সম্পন্ন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান অনলাইনের মাধ্যমে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এবং মাউশির মহাপরিচালককে তথ্য প্রদান করবেন।
- কর্মকাল হিসাব:
- অবমুক্তি থেকে যোগদানের মধ্যবর্তী সময়টি কর্মকাল হিসেবে গণ্য হবে।