রাসেলস ভাইপার: বাংলাদেশের বিষধর সাপ: রাসেলস ভাইপার, যা “চন্দ্রবোড়া” নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের অন্যতম প্রাণঘাতী সাপ। এটি ‘ভাইপারিডি’ পরিবারের সদস্য এবং ‘Daboia russelii’ বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত। এই সাপটি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশের প্রায় সকল এলাকায়ই এর বিস্তৃতি রয়েছে।
রাসেলস ভাইপার এর আকার ও বর্ণনা:
রাসেলস ভাইপার মাঝারি আকারের সাপ, যা সাধারণত ১.২ থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হয়। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর দৈর্ঘ্য ২ মিটার পর্যন্তও হতে পারে। এর মাথা ত্রিভুজাকৃতির এবং চোখের পुतলি উলম্ব। শরীরের রঙ বাদামী, লালচে বাদামী বা ধূসর বর্ণের হয়। এর পিঠে গাঢ় বাদামী রঙের অκαν্ঠযুক্ত আঁশ এবং পাশে ধূসর ছোপ ছোপ দেখা যায়।
রাসেলস ভাইপারএর বিষ ও প্রভাব:
রাসেলস ভাইপারের বিষ হিমোটক্সিন, নিউরোটক্সিন এবং মায়োটক্সিনের মিশ্রণ। এই বিষ রক্তের কোষ ভেঙ্গে ফেলে, স্নায়ুতন্ত্রকে ব্যাহত করে এবং পেশী বিকলতা সৃষ্টি করে। কামড়ানোর পর তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব, রক্তপাত, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, ঘাম, দুর্বলতা দেখা দেয়। চিকিৎসা না করলে মৃত্যুও হতে পারে।
রাসেলস ভাইপার এর আচরণ ও বাসস্থান:
রাসেলস ভাইপার রাতের বেলা বেশি সক্রিয় থাকে। এরা সাধারণত খোলা জায়গা, ঝোপঝাড়, বনভূমি, কৃষিজমি এমনকি মানববসতির কাছাকাছিও বাস করে। এরা ইঁদুর, সাপ, খাড়শিং, চামেলিহা ইত্যাদি খেয়ে থাকে।
রাসেলস ভাইপার এর মানুষের সাথে সংঘাত:
রাসেলস ভাইপার আক্রমণাত্মক নয়, তবে বিপদ অনুভব করলে বা বিরক্ত হলে কামড়াতে পারে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর মানুষ রাসেলস ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে অনেকেই মারা যায়।
রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপজ্জনক সাপ। এদের সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সাপ দেখা গেলে তাকে মারার চেষ্টা না করে বরং বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
রাসেল ভাইপার সম্পর্কে জানা অজানা প্রশ্ন ও উত্তর
১। রাসেলস ভাইপার কামড়ালে কি হয়?
রাসেলস ভাইপার, বা চন্দ্রবোড়া, বাংলাদেশের অন্যতম বিষধর সাপ। এদের কামড়ানো মারাত্মক হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। কামড়ানোর পর নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:
- তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব এবং লালভাব: কামড়ানোর স্থানে তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব এবং লালভাব দেখা দেয়।
- রক্তপাত: কামড়ের স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে।
- সাধারণ লক্ষণ: বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, ঘাম, দুর্বলতা, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
- গুরুতর লক্ষণ: রক্তচাপ কমে যাওয়া, হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া, kidney ফাংশন বিকল হওয়া, ব্রেন হেমরেজ ইত্যাদি।
২। রাসেল ভাইপার কামড়ানোর কতদিন পর?
লক্ষণগুলি সাধারণত কামড়ানোর 15 মিনিট থেকে 2 ঘন্টার মধ্যে দেখা দেয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখাতে দেরি হতে পারে।
৩। রাসেলস ভাইপার কামড়ের চিকিৎসা:
রাসেলস ভাইপার কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা উচিত:
- শান্ত থাকুন: আতঙ্কিত হওয়ার পরিবর্তে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
- কামড়ানো স্থান পরিষ্কার করুন: সাবান ও পানি দিয়ে কামড়ানো স্থান পরিষ্কার করুন।
- কামড়ানো স্থানটি হৃদস্পন্দনের চেয়ে নিচু রাখুন: কামড়ানো স্থানটি হৃদস্পন্দনের চেয়ে নিচু রাখুন। যদি সম্ভব হয়, একটি কাপড় দিয়ে বাঁধুন।
- তৎক্ষণই চিকিৎসা সহায়তা নিন: যত দ্রুত সম্ভব একটি হাসপাতালে যান বা ডাক্তার ডাকুন।
- হাসপাতালে রোগীকে অ্যান্টিভেনম প্রদান করা হবে। এছাড়াও, লক্ষণগুলির উপর নির্ভর করে রোগীকে সহায়ক চিকিৎসা প্রদান করা হবে।
৪। রাসেলস ভাইপার উত্তেজিত হলে কি করে?
রাসেলস ভাইপার বিভিন্ন কারণে উত্তেজিত হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
বিপদ অনুভব করা: যদি এটি মনে করে যে এটি হুমকির মুখে পড়েছে, তবে এটি উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারে।
ক্ষুধার্ত হওয়া: যদি এটি ক্ষুধার্ত হয়, তবে শিকারের সন্ধানে এটি উত্তেজিত হতে পারে।
প্রজনন মৌসুম: প্রজনন মৌসুমে, পুরুষ রাসেলস ভাইপারগুলি একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করতে এবং সঙ্গীর আকর্ষণ করতে উত্তেজিত হতে পারে।
আবাসস্থল হারানো: যদি এদের আবাসস্থল হারিয়ে ফেলে বা বিরক্ত হয়, তবে এরা উত্তেজিত হতে পারে।
৫। উত্তেজিত রাসেলস ভাইপারের কিছু লক্ষণ:
ফোঁপানো: এটি তার ফণাটি সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারে।
ফিসফিসানো: এটি জোরে জোরে ফিসফিসাতে পারে।
মাথা নাড়ানো: এটি দ্রুত দ্রুত মাথা নাড়াতে পারে।
শরীর উঁচু করা: এটি মাটি থেকে শরীরের কিছু অংশ উঁচু করে তুলতে পারে।
আক্রমণ: যদি এটি খুব বেশি উত্তেজিত হয়, তবে এটি আক্রমণ করতে পারে।
৬। সাপে কামড়ানোর লক্ষণ কতদিন লাগে?
সাপের কামড়ানোর লক্ষণগুলি সাধারণত কামড়ানোর 15 মিনিট থেকে 2 ঘন্টার মধ্যে দেখা দেয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখাতে দেরি হতে পারে।
৭। সাপে কামড়ানোর পর কি খাওয়া উচিত?
সাপে কামড়ানোর পর কিছুই খাওয়া উচিত নয়। মুখে খাবার বা পানি রাখলে বিষ গিলে ফেলার ঝুঁকি বাড়ে। শুধুমাত্র পানি পান করা উচিত।
৮। রাসেলস ভাইপার বিষের কাজ:
রাসেলস ভাইপারের বিষ হিমোটক্সিন, নিউরোটক্সিন এবং মায়োটক্সিনের মিশ্রণ। এই বিষ রক্তের কোষ ভেঙ্গে ফেলে, স্নায়ুতন্ত্রকে ব্যাহত করে এবং পেশী বিকলতা সৃষ্টি করে। কামড়ানোর পর নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:
তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব এবং লালভাব: কামড়ানোর স্থানে তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব এবং লালভাব দেখা দেয়।
রক্তপাত: কামড়ের স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে।
সাধারণ লক্ষণ: বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, ঘাম, দুর্বলতা, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
গুরুতর লক্ষণ: রক্তচাপ কমে যাওয়া, হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া, kidney ফাংশন বিকল হওয়া, ব্রেন হেমরেজ ইত্যাদি।
৯। রাসেলস ভাইপার কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা:
শান্ত থাকুন: আতঙ্কিত হওয়ার পরিবর্তে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
কামড়ানো স্থান পরিষ্কার করুন: সাবান ও পানি দিয়ে কামড়ানো স্থান পরিষ্কার করুন।
কামড়ানো স্থানটি হৃদস্পন্দনের চেয়ে নিচু রাখুন: কামড়ানো স্থানটি হৃদস্পন্দনের চেয়ে নিচু রাখুন। যদি সম্ভব হয়, একটি কাপড় দিয়ে বাঁধুন।
তৎক্ষণই চিকিৎসা সহায়তা নিন: যত দ্রুত সম্ভব একটি হাসপাতালে যান বা ডাক্তার ডাকুন।
হাসপাতালে রোগীকে অ্যান্টিভেনম প্রদান করা হবে। এছাড়াও, লক্ষণগুলির উপর নির্ভর করে রোগীকে সহায়ক চিকিৎসা প্রদান করা হবে।
১০। রাসেল ভাইপার চেনার উপায়:
বর্ণ: রাসেলস ভাইপারের শরীরের রঙ বাদামী, লালচে বাদামী বা ধূসর বর্ণের হয়।
আঁশ: এর পিঠে গাঢ় বাদামী রঙের আঁশ এবং পাশে ধূসর ছোপ ছোপ দেখা যায়।
মাথা: মাথা ত্রিভুজাকৃতির এবং চোখের উলম্ব।
দৈর্ঘ্য: সাধারণত ১.২ থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হয়।
১১। সাপে কামড়ালে কি পানি খেলে উপকার হয়?
না, সাপে কামড়ালে পানি খাওয়া উপকার করে না। মুখে খাবার বা পানি রাখলে বিষ গিলে ফেলার ঝুঁকি বাড়ে।