২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য বাংলায় ও অন্যান্য তথ্য

 একুশে ফেব্রুয়ারি নতুন আরেকটি ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। দেখতে দেখতে আবারো ২০২৪ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি এসে গেল। ২১ শে ফেব্রুয়ারির কথা মনে হলেই ভেতরটা কেমন জানি করে। কারণ অন্যান্য দিনের মতো একুশে ফেব্রুয়ারি নয়। এই দিনটি বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় দিন। ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটি আমরা এমনিতে পাইনি। এই দিনটি পেয়েছি ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে । 

২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য

একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য নিয়ে আজকে আলোচনা করব। এবং পাশাপাশি ২১শে ফেব্রুয়ারি কবিতা, একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা , ২১ শে ফেব্রুয়ারি বক্তব্য এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরব। আশা করি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকবেন।

২১ শে ফেব্রুয়ারির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য

প্রতিদিনের মতো ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি মনে হলেও আজকের দিনটি আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আজকের এই দিনটির কারণে আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি। এবং উপস্থিত আপনাদের সামনে যে ভাষায় কথা বলতেছি। একমাত্র বাংলা ভাষাও এই দিনটির কারণে পেয়েছি।

শুধু তাই নয় ২১ শে ফেব্রুয়ারি থেকে প্রত্যেক বাঙালির অর্থাৎ সারা বিশ্বের অনেক কিছু শেখার আছে। কারণ পাকিস্তান আমাদের উপর ভাষা নিয়ে জুলুম করেছিল। আমার মায়ের মাতৃভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তাদের চেষ্টা সফল হয়নি। আমার ভাইয়ের রক্তে অর্জিত এবং জীবন ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছি আমাদের এই একুশে ফেব্রুয়ারি। 

ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতিসত্তার একমাত্র প্রতীক। ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করা হয়ে থাকে। একুশের ভাষা শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দিনটি আমাদের গর্ব , আমাদের অহংকার। এবং আমাদের অর্জিত ফল। ভাষা আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের ঐতিহ্য। আর এই ভাষার মাধ্যমেই আমরা প্রকাশ করি আমাদের ভাবনা চিন্তা এবং আমাদের অনুভূতি। 

একুশে ফেব্রুয়ারিই যেন বাঙ্গালির অঘোষিত স্বাধীনতা দিবস । শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণ ২১ শে ফেব্রুয়ারি । 

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি যেন চেতনায় উদ্দীপিত হয়ে বাঙালিরা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, আজ তা দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ করেছে । 

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমুহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে । 

২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান । মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার চেতনা । যে চেতনার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ আগামীর দিকে।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

আজকের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রতিটি বাঙালির জন্য স্মরণীয় এবং গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি সারা বিশ্বে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয় এবং সুপরিচিত একটি দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলো একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সমস্ত বিশ্বের একটি বিশেষ দিন। এটি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। 1999 সালে জাতিসংঘ কর্তৃক ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। 

১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর জীবন মরণ অত্যাচার শুরু করে। এবং শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে অনেক তরুণ তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী শহীদ হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে রফিক, শফিক , জব্বার , শফিউর , সালাম , বরকত সহ উল্লেখযোগ্য আরো অনেক এই দিনে শহীদ হন।

২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা

এই দিনে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফেব্রুয়ারির কবিতা এবং একুশের কবিতা আবৃত্তি করে থাকে। নিম্নে কয়েকটা ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা দেওয়া হল-

২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা ১

ভাষা, মায়ের সুখের প্রতীক,

প্রাণের চেয়েও প্রিয়।

যে ভাষায় প্রাণ জুড়ে,

সবার সুখের আহ্বান মিঠালো।

সেই মিষ্টি ভাষা, মোদের মধুর,

মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষা।

স্লোগান ভাষা, যুবকের ভালবাসা,

যে ভাষায় সদা জাগো,

সে ভাষার মর্ম কোন কতা?

তারা মানে না বাঁধা ভঙ্গের ধারা,

হায়নার গর্জন লঙ্গিয়ে চলে,

হুংকারে ধনি পতি ধনি,

রাষ্ট্রভাষা চাই, বাংলা চাই।

ভাষা, রক্তে ভেজা ২১শের দুপুর,

রক্ত! নতুন সূর্যদয়।

যে ভাষায় লাগে রক্তের বিনিময়,

ত্যাগে বেজেছে সাম্যের গীতি।

পৃথিবীর মানুষ অভাব রয়,

বাংলা ভাষার জয়।

২১ ফেব্রুয়ারী কবিতা ২

হৃদয়ে জ্বলে উঠে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি,

লাখো বাঙালির চেয়ে করুন আহাজারি।

একুশ, তুমি বাংলার মানুষের হৃদয় ভরা আশা,

তোমার কারণে পেয়েছি আজ কাঙ্খিত মাতৃভাষা।

রক্ত ঝরালো সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার,

বায়ান্নর সেই করুন কাহিনী মনে পড়ে বারবার।

স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে সেই বিষন্ন দিনের কথা,

যত ভাবি ততই যেন মনে পাই বড় ব্যথা।

প্রতিবাদে মুখর দৃঢ় চিত্তে বাংলার দামাল ছেলে,

আরো আছে কত শ্রমিক, যুবক, নারী, কৃষক ও জেলে।

অবশেষে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হলো সরকার,

বাঙালিরা পেল মাতৃভাষার সোনালী দিবাকর।

রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আজ কাঙ্খিত মাতৃভাষা,

একুশ, তুমি চির অমর তুমি আমাদের ভালবাসা।

২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা ০৩

২১ শে ফেব্রুয়ারি, তোমার প্রতীক্ষা মনে হারানো নয়,
স্মৃতির স্বপ্নে তোমার আসবে, পৃথিবী উজ্জ্বল করে তোমার আলোয়।
একুশের মহান দিনে, হৃদয়ে বাজে গান,
শহীদের রক্তে রঙিন হয়ে উঠে বাংলার মাটির স্বপ্ন।
স্মৃতির মধ্যে ভাসে তোমার সব চেয়ে প্রিয় ছবি,
একুশের স্মৃতি হল আমাদের অমর প্রণয় অভিমানী।
২১ শে ফেব্রুয়ারি, তোমার স্মৃতি মাঠে বিতারিত হয়ে,
সকল বাঙালি তোমার অমর প্রেম স্মৃতির ভিতরে ধরে রাখে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা ২০০ শব্দ

২১শে ফেব্রুয়ারি: ভাষা শহীদদের স্মরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
২১শে ফেব্রুয়ারি, বাংলার ইতিহাসে এক অম্লান দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিরস্ত্র বাঙালি শিক্ষার্থীদের উপর পাকিস্তানি পুলিশের গুলি চলে। এই ঘটনায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ হন। তাদের আত্মত্যাগের স্মরণে আমরা প্রতি বছর এই দিনটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করি।
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট:
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান গঠিত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চায়। বাংলাভাষী মানুষ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ১৯৫২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ‘ভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে।
২১শে ফেব্রুয়ারির ঘটনা:
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ‘ভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি মিছিলের আয়োজন করে। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছে পৌঁছালে পুলিশ গুলি চালায়। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ হন।
ভাষা আন্দোলনের প্রভাব:
ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের আত্মসম্মান ও ভাষার প্রতি গর্ববোধের প্রমাণ দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন বাংলাদেশ।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা আমাদের অহংকার। ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ভাষা শহীদদের ত্যাগ ও আত্মত্যাগ। এই দিনটি আমাদের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top