পবিত্র রমজান মাসের পর আসে শাওয়াল মাস। এই মাসটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। ঈদুল ফিতরের আনন্দে মুখর থাকলেও, রমজানের শিক্ষা ধরে রাখার জন্য নবী করিম (সাঃ) এই মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
শাওয়াল মাসের হাদিসে ছয় রোজার ফজিলত
আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমজান মাস পূর্ণ করে তারপর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখে, সে যেন পুরো বছর রোজা রেখেছে।” (সুনানে নাসায়ী, হাদিস নং: ২৪০৮)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখলে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী পাপগুলো মাফ হয়ে যায়।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১৭৫৯)
হযরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের সব ফরজ রোজাগুলো রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪)
হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখ, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। (তিরমিজি: ১/১৫৩৪)।
এ বিষয়ে ইমাম নববি বলেন, রমজান মাস ২৯ বা ৩০ দিনের হয়ে থাকে। রমজানের ৩০টি রোজা ও শাওয়ালের ৬টি রোজা মিলে মোট ৩৬টি রোজা হয়। আল্লাহ তাআলার কোরআনে বলেছেন,
مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَهٗ عَشۡرُ اَمۡثَالِهَا
অর্থ : যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ। (সুরা আনআম: ১৬০)
সেই হিসাবে ৩৬টি রোজায় ১০গুণ সওয়াব পেলে ৩৬০ দিন বা পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
শাওয়াল মাসের ছয় রোজার সময়
- শাওয়াল মাসের যেকোনো ছয় দিন নফল রোজা রাখা যাবে।
- তবে, ঈদের দিন (১লা শাওয়াল) এবং ঈদের পরের দিন (২রা শাওয়াল) রোজা রাখা মাকরুহ।
- ঈদের ছুটির বাকি দিনগুলোতে রোজা রাখা উত্তম।
শাওয়াল মাসের ছয় রোজার নিয়ম
- অন্যান্য নফল রোজার মতোই স্বাভাবিক নিয়ম মেনে এই ছয়টি রোজা রাখা যাবে।
- রোজার শুরুতে সহরী খাওয়া ও রোজা ভাঙার সময় ইফতার করা সুন্নত।
- রোজার সময় নিয়ম-কানুন মেনে চলা এবং আল্লাহর নিকট থেকে সওয়াবের প্রত্যাশা করা উচিত।
শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখলে রমজানের সওয়াবের সাথে সাথে অগণিত পাপের মাফি ও বরকত লাভের সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। রমজানের শিক্ষা ধারণ করে আধ্যাত্মিক জীবন সমৃদ্ধ করার জন্য এই নফল রোজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।