শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত সামনের সোমবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।
শবে বরাত অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত। অর্থাৎ সবে অর্থ রাত এবং বরাত অর্থ হচ্ছে মুক্তি। শবেবরাতকে আমরা অনেকেই লাইলাতুল বরাত নামে পরিচিত আছে। এছাড়া শবে বরাত কে মুক্তির রজনী অথবা মুক্তির রাত বলা হয়ে থাকে। এটি মূলত বিশ্বের সকল মুসলমান দেশে পালন করা হয়ে থাকে।
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস
শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাত বলতে আমরা বুঝি আরবি হিজরী শাবান মাসের 14 ও 15 তারিখের মধ্যবর্তী রাত। অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতটিকে শবেবরাত অথবা লাইলাতুল বরাত হিসাবে পালন করা হবে।
হাদিসে শরীফে শবে বরাতকে “পবিত্র রাত”, “ক্ষমার রাত”, “ভাগ্য রজনী” এবং “বরকতময় রাত” বলা হয়েছে। অনেকে হাদিসের ভিত্তিতে শবে বরাতের রাতে রোজা রাখা, নফল নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, দান-খয়রাত এবং দোয়া-মোনাজাত করার ফজিলত বর্ণনা করেছেন।
শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে
২০২৪ সালের শবে বরাত ২৬ ফেব্রুয়ারি রোজ রবিবার সারা দেশে পালন করা হবে। আরবি মাসের অর্থাৎ শাবান মাসের 14 তারিখ দিনগত রাতকে লাইলাতুল বরাত অথবা শবে বরাত অথবা মুক্তির রজনী বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি শব্দ থেকে এবং লাইলাতুল বরাত কথাটি আরবি শব্দ থেকে এসেছে। শবে বরাতকে স্মরণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিস রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ মধ্যশাবানের রাতে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তার সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
আজকের রাতটি প্রতিটি মুসলমানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই শবেবরাতের রাতে বান্দা হাত তুলে তার অতীতের গুনাহ মাফ চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। এটি হচ্ছে বিশেষ ইবাদতের রাত এবং ক্ষমা চাওয়ার রাত। তাই রাতকে মুক্তির রাত বলা হয়ে থাকে। এই রাতে বান্দা তার পাপাচারের মুক্তি পেতে পারে।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রজনী সম্পর্কে বলেন,
এই রাত্রিতে এবাদতকারীদের গুনাহ সেই আল্লাহতালা ক্ষমা করে দেন। তবে কেবল আল্লাহর সঙ্গে শিরককারী, সুদখোর, গনক, জাদুকর , কৃপণ , শরাবি, যেনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্ট দান করীকে আল্লাহ মাফ করবেন না।
শবে বরাতের ফজিলত
হাদিসে বর্ণিত আছে এই লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত কে আলাদা কিছু ভাবার নিষেধ করা রয়েছে। অন্যান্য রাতের তুলনায় এই রাতটি তে আল্লাহ তা’আলা ইবাদত বন্দেগী করে তার নিজের পাপাচারের প্রায়শ্চিত্ত করতে বলছেন। শবে বরাতের রাতে মাগরিব নামাজের পর নিজের মুক্তির জন্য ঈমান ও আকাইদের সাথে দুই রাকাত করে মোট ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়ার কথা রয়েছে হাদিসে। অর্থাৎ শবে বরাতের রাতে নামাজের পরে দুই রাকাত করে সর্বমোট ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়ার নির্দেশ রয়েছে।
নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়বে এবং অন্য যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে। এভাবে সর্বমোট ছয় রাকাত নামাজ পড়বে। নামাজ শেষ করে সুরা ইয়াসিন অথবা সূরা ইখলাস ২১ বার তেলাওয়াত করতে পারেন।
যেহেতু সারারাত মুক্তির রাত। তাই আপনি চাইলে নামাজ শেষ করে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে এবং আপনার মুক্তির উদ্দেশ্যে এবং যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে কোরআন তেলাওয়াত অথবা নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।
এই রাতে অন্যান্য রাতে তুলনায় ইবাদতের মূল্য অনেক বেশি। তাই শবে বরাত অথবা লাইলাতুল বরাত রাতে আমরা সবাই আল্লাহর ইবাদত করব। আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলবো। এবং অতীতের জানা অজানা পাপ থেকে মুক্তির দোয়া করব। এবং যারা আমাদেরকে ছেড়ে পর করে চলে গিয়েছেন তাদের জন্য দোয়া করব।
শবে বরাত অথবা লায়লাতুল বরাত এর নফল নামাজের নিয়ম
১। শবে বরাত নামাজের নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা , আল্লাহ আকবার বলে হাত বাঁধতে হবে।
হাত বাধার পর ছানা পাঠ করতে হবে;
২। সারা রাত শেষে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে এবং সূরা ফাতেহা পাঠ করার পরে কুরআন থেকে যে কোন একটি সূরা পড়তে পারেন।
৩। এরপর অন্যান্য নামাজের মত রুকুতে গিয়ে তিনবার অথবা পাঁচ বার সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়বেন এবং সেজদাতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়বেন।
৪। একইভাবে দ্বিতীয় রাকাত সম্পন্ন করবেন এবং সর্বশেষ তাশাহুদ , দরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাবেন।
এই রাতে আপনি চাইলে, ২, ৪, ৬, ৮, ১০ ১২ রাকাত করে নামাজ আদায় করতে পারবেন। অথবা চাইলে আপনি যেকোনো জোড় সংখ্যার নামাজ আদায় করে লাইলাতুল বরাত পালন করতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনাকে দুই রাকাত করে পড়তে হবে। এভাবে আপনি যত পড়তে পারেন ততই আপনার জন্য ভালো হবে। তবে এশার নামাজ শেষ করে শবে বরাতের নামাজগুলো পড়বেন এবং সর্বশেষ বিতরের নামাজ পড়ে নিবেন।
শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামায পড়ার নিয়ম
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসী ও ১৫ বার করে সূরা ইখলাছ শরীফ। অতপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফযীলত বর্ণনাঃ রুজিতে রবকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বখসিস পাওয়া যাবে।
শবে বরাতের ৮ রাকাত নফল নামায পড়ার নিয়মঃ দুই রাকাত করে পড়তে হবে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর , সূরা ইখলাছ ৫ বার করে। একই নিয়মে বাকি সব। ফযীলত বর্ণনাঃ গুনাহ থেকে পাক হবে , দু’আ কবুল হবে ও বেশী বেশী নেকী পাওয়া যাবে।
শবে বরাতের ১২ রাকাত নফল নামায পড়ার নিয়মঃ দুই রাকাত করে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা ইখলাছ। এই নিয়মে বাকি নামায শেষ করে, ১০ বার কালেমা তাওহীদ, ১০ বার কালেমা তামজীদ ও ১০ বার দুরূদ শরীফ।
শবে বরাতের ১৪ রাকাত নফল নামায পড়ার নিয়মঃ দুই রাকাত করে। প্রতি রাকাত সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়ুন। ফযীলত বর্ণনাঃ যে কোন দু’আ চাইলে তা কবুল হবে।
শবে বরাতের ৪ রাকাত নফল নামায পড়ার নিয়মঃ ১ সালামে পড়তে হবে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পর ৫০ বার সূরা ইখলাছ শরীফ। ফযীলত বর্ণনাঃ গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে সদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভুমিষ্ঠ হয়েছে।
শবে বরাতের নামাজের দোয়া এবং শবে বরাতের আমল
শুরু করার দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ |
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিনাশ শাইতানির রাজিম
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি শয়তানের পথভ্রষ্টতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।
নামাজের পর দোয়া: اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي |
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুন কারীমুন্ তুহিব্বুল ‘আফ্ফা ফা’আফু ‘আন্নী
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি অতি ক্ষমাশীল, পরম দানশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও।
শবে বরাত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
১। শবে বরাত কবে ? অথবা শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে ?
শবে বরাত ২৫ ফেব্রুয়ারি, রোববার দিবাগত রাতে পালিত হবে। সাধারণভাবে: শবে বরাত শাবান মাসের ১৪ তারিখে পালিত হয়। তবে, চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে তারিখ পরিবর্তিত হতে পারে।
২। শবে বরাতের রোজা কয়টি ?
শবে বরাতের রাতে রোজা রাখা সুন্নত। তবে, এটি ফরজ নয়। কিছু হাদিসে শবে বরাতের আগের দিন এবং পরের দিন রোজা রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, রোজা রাখার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সামর্থ্য ও ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।
৩। শবে বরাত করণীয় ও বর্জনীয় কি কি ?
এই রাতে করনীয়,
- রাত জেগে ইবাদত করা।
- নফল নামাজ পড়া।
- তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।
- কুরআন তেলাওয়াত করা।
- দোয়া-মুনাজাত করা।
- আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
- গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা।
এই রাতে বর্জনীয়,
- গান বাজনা করা।
- নাচ গান করা।
- খাওয়া-দাওয়া করা।
- ঘুমিয়ে থাকা।
৪। শবে বরাত কেন পালন করা হয় ?
শবে বরাত পালনের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:
১. ক্ষমা ও মুক্তির রাত: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুন থেকে বান্দাদেরকে মুক্ত করেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। এই রাতে আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত বিশেষভাবে বর্ষিত হয়। তাই, এই রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২. ভাগ্যলিপি লিখন: কিছু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এই রাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্যলিপি লিখিত হয়। তাই, এই রাতে আল্লাহর কাছে ভালো ভাগ্যের জন্য প্রার্থনা করা উচিত।
৩. ইবাদতের রাত: শবে বরাত ইবাদতের একটি বিশেষ রাত। এই রাতে রাত জেগে ইবাদত করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকির করা এই রাতের ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
৪. রোজার রাত: শবে বরাতের রাতে রোজা রাখা সুন্নত। এই রাতের রোজা রাখার ফলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ হতে পারে।
৫. দান-খয়রাতের রাত: শবে বরাত দান-খয়রাতের একটি বিশেষ রাত। এই রাতে দান-খয়রাত করলে আল্লাহ তায়ালা তা কতগুণ বৃদ্ধি করে দান করেন। দান-খয়রাতের মাধ্যমে অভাবীদের সাহায্য করা এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।