সরকার দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদের জন্য প্রায় এক লক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও গুণগত মান উন্নয়ন এবং শূন্য পদের সংকট দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে, যাতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।
এটি বাস্তবায়ন করতে, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শূন্য পদের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। তারা এই তথ্য সংগ্রহ করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আগামী মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে।
এই প্রক্রিয়াটি শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও দায়বদ্ধতা এবং শিক্ষকের প্রতি দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হবে। নতুন নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং শিক্ষার গুণগত মান আরও উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) একযোগে দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদের জন্য শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশের শূন্য পদের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শূন্য পদের চাহিদা আহ্বান করা হয়েছে।
পঞ্চম এবং ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি:
এনটিআরসিএ সূত্র অনুযায়ী, পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মোট ৯৭ হাজার শূন্য পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল, তবে এর মধ্যে মাত্র ১৯ হাজার ৫০০ পদ পূর্ণ হয়েছে। এর ফলে, এখনও প্রায় ৭৭ হাজার ৫০০ পদ ফাঁকা রয়েছে। সেই সঙ্গে চলতি বছরে আরও ২০ থেকে ২৫ হাজার শিক্ষক পদ অবসরের কারণে শূন্য হয়ে পড়েছে। এর ফলে, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ শূন্য পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা জানান, এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া আগামী তিন মাসের মধ্যে শুরু হতে পারে।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির জন্য সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শূন্য পদের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি হতে পারে। এবার শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগে একটি বড় অগ্রগতি ঘটবে, কারণ ইতোমধ্যে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এর ফলে, যোগ্য প্রার্থীদের সংকট কাটানোর জন্য একটি সুষ্ঠু এবং সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত হবে।
শিক্ষক নিয়োগ: এনটিআরসিএ’র ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি ও শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া
গত ৩০ অক্টোবর থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য শূন্য পদের চাহিদা আহ্বান করেছে। এ প্রক্রিয়াটি “ই-রিকুইজিশন” নামে পরিচিত, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে শূন্য পদের চাহিদা ১০ নভেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে, আর চাহিদা ফি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হবে ১৩ নভেম্বর।
এটি এবারের একটি বিশেষ উদ্যোগ, কারণ প্রথমবারের মতো তিন বছরের সম্ভাব্য শূন্য পদের চাহিদা পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৭ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের শূন্য পদের পূর্ণ ধারণা দিতে বলা হয়েছে। এর আগে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য হালনাগাদ করার জন্য ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ করে এনটিআরসিএ, যা শূন্য পদের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণে সহায়ক হবে।
এনটিআরসিএ গত ৩১ মার্চ পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল, যেখানে মোট শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৭৩৬টি। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজের শূন্য পদ ছিল ৪৩ হাজার ২৮৬টি এবং মাদ্রাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল ৫৩ হাজার ৪৫০টি। পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে ২১ আগস্ট ১৯ হাজার ৫৮৬ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে নিয়োগের জন্য সম্মতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এনটিআরসিএ সূত্র জানাচ্ছে, বর্তমানে শূন্য পদের চাহিদা আহ্বান করা হয়েছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে, শূন্য পদের চূড়ান্ত তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এ প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে, তিন মাসের মধ্যে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এনটিআরসিএর সুপারিশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া
এনটিআরসিএ ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রদান করে আসছে। তবে শুরুর দশ বছর পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রদান করে। এরপর থেকে এনটিআরসিএ পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে।
এদিকে, এনটিআরসিএ’র সচিব, এ এম এম রিজওয়ানুল হক, এক সাক্ষাৎকারে জানান, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য শূন্য পদের চাহিদা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং শূন্য পদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। তিনি আরো বলেন, “এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আগামী তিন মাসের মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা সম্ভব হবে।”
এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষক সংকট নিরসন করা এবং শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা। শূন্য পদ পূরণের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট দূর হবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চমানের শিক্ষা নিশ্চিত হবে।
এছাড়া, আগামী তিন বছরের (২০২৭ সাল পর্যন্ত) শূন্য পদের পূর্বাভাসের মাধ্যমে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা হবে, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।