একজন HSC পরীক্ষার্থীর কান্না: নিয়ম বড় না মানবতা?

আজ ২৬ জুন ২০২৫, সারা দেশের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি ২০২৫ সালের বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষায় অংশ নেয়। সকাল ১০টায় শুরু হয় এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা শেষ হয় দুপুর ১টায়। কিন্তু এই পরীক্ষার দিনেই ঘটে যায় একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। একটি মেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে না শুধুমাত্র একটু দেরি হওয়ার কারণে। অথচ তার দেরির পেছনে ছিল জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত — তার মায়ের হঠাৎ স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া।

উক্ত ছাত্রী পরীক্ষার দিন সকালবেলা তার মাকে হসপিটালে ভর্তি করাতে ব্যস্ত ছিল। তার বাবা নেই, পরিবারে এমন কেউ ছিল না যে এসব দায়িত্ব নিতে পারে। একজন কিশোরী হিসেবে এই চাপে সে একা নিজেই সব সামলে পরীক্ষার হলে পৌঁছায় — তবে সময়ের এক দেড় ঘণ্টা পরে।

কিন্তু পরীক্ষার হলে ঢোকার অনুমতি তাকে দেওয়া হয়নি। পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত সময় পার হলে কেউ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে না। সেই নিয়ম দেখিয়ে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এত বড় এক মানসিক ধাক্কার পর মেয়েটি কিছু বলারও ভাষা হারিয়ে ফেলে। সে সোজা মাটিতে বসে পড়ে এবং কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার চোখের জল বলে দিচ্ছিল, তার শুধু একটা সুযোগ দরকার ছিল — হয়তো সে পাশ করতে পারতো, হয়তো তার জীবনের এক বছর নষ্ট হতো না।

নিয়ম অবশ্যই জরুরি। কিন্তু বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে নিয়মের বাইরেও মানবিক চিন্তা করা দরকার। এই ছাত্রী কোনো খেয়ালখুশির কারণে দেরি করেনি। তার দেরির পেছনে ছিল একটি জীবন-মরণ পরিস্থিতি।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি এমন পরিস্থিতিতেও মানবিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারে, তাহলে শিক্ষার্থীদের জীবনে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। একজন ছাত্রের জন্য একটি বছর নষ্ট হওয়া মানে অনেক কিছু — তার ভবিষ্যৎ, তার পরিবার, তার স্বপ্ন সবকিছুই থেমে যেতে পারে।

আমাদের করণীয় কী?

জরুরি পরিস্থিতির জন্য কিছু ব্যতিক্রম রাখার চিন্তা করা উচিত।

শিক্ষা কর্মকর্তাদের আরও মানবিক হতে হবে।

পরীক্ষার নিয়মের পাশাপাশি সহানুভূতির জায়গাও থাকতে হবে।

আজকের এই ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় — শুধু নিয়ম দিয়ে নয়, ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং মানবিকতা দিয়েও একটি শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হওয়া উচিত। একজন পরীক্ষার্থী যদি সত্যিই একটি কঠিন বাস্তবতা পার হয়ে পরীক্ষা দিতে আসে, তবে তাকে একটি সুযোগ দেওয়া উচিত। হয়তো সেই ছোট্ট সুযোগই হতে পারতো তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।