বাংলাদেশের সব থেকে বড় মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংক হল বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। এই আর্টিকেলটিতে আমরা ইসলামিক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বর্তমানে আমরা ঘরে বসেই ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে পারি নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই আর্টিকেলটি ইসলামী একাউন্ট ব্যাংক খোলার সম্পর্কে পদ্ধতি জানতে পারবেন। তাই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও সুবিধা
আপনাদের অনেকের মনে ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে অনেক কনফিউশন রয়েছে। ব্যাংক একাউন্ট খোলার আগে এসব বিষয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া অনেক ভালো। কেননা , এ ব্যাংকের অধীনে অনেক ক্যাটাগরি রয়েছে এর মধ্যে থেকে কোন ক্যাটাগরি অনুসারে ব্যাংক একাউন্ট চালু করতে ইচ্ছুক জানা থাকলে আপনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন।
তাই এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে আপনার প্রতিটি পোস্টের উত্তর সঠিকভাবে থাকতে পারবেন। চলুন আর দেরি না করে দেখে নেই আজকের আর্টিকেলটি।
ইসলামী ব্যাংক কী?
ইসলামী ব্যাংক হলো এমন একটি ব্যাংক যা ইসলামের নীতি ও শরীয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো রিবাহ (সুদ) এর অনুপস্থিতি, কারণ ইসলাম সুদ নেওয়া বা দেওয়া নিষিদ্ধ করেছে। ইসলামী ব্যাংক সাধারণত আর্থিক লেনদেনের জন্য এমন পদ্ধতি অনুসরণ করে যা ইসলামী নীতিমালা, যেমন মুদারাবাহ, মুশারাকা, ইজারা, এবং মুরাবাহা, এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট সাধারণত তিনটি মূল প্রকার হয়, যা গ্রাহকের প্রয়োজন ও ব্যবহারের ধরণ অনুসারে বিভক্ত করা হয়। এই প্রকারগুলো হলো:
- কারেন্ট একাউন্ট
- সেভিংস একাউন্ট
- স্টুডেন্ট একাউন্ট
ই একাউন্টগুলো সুদবিহীন এবং শরীয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত হয়, যাতে গ্রাহক লাভ পেতে পারে, তবে সুদ বা “রিবাহ” (Sūd) একেবারে নিষিদ্ধ।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে
আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট ও অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি।
১। আবেদনকারীর সদ্য তোলা ২ কপি রঙিন ছবি পাসপোর্ট সাইজের।
২। নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি।
৩। নমিনির সদ্য তোলা ১/২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
৪। প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স / ই-টিন সার্টিফিকেট।
৫। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে গার্ডিয়ানের তথ্য প্রয়োজন হবে।
৬। বিশেষ ক্ষেত্রে নাগরিক সনদপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
৭। একাউন্ট তৈরি করার পরে ন্যূনতম ডিপোজিট ফি।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা ন্যূনতম ডিপোজিট ফি প্রদান করতে হয়। এখান থেকে ৫০০ টাকা কখনো উত্তোলন করতে পারবেন না। এছাড়াও মাত্র ১০০ টাকায় ইসলামী ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।
কারেন্ট ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও দরকারি ডকুমেন্টস
ইসলামী ব্যাংকে কারেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য গ্রাহকদের সুদ প্রদান করা হয় না, কারণ ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমের মূল উদ্দেশ্য হলো সুদবিহীন অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা। সুতরাং, ইসলামী ব্যাংকেও অন্যান্য ব্যাংকের মতো ইন্টারেস্ট বা সুদ প্রদান করা হয় না।
তবে, ইসলামী ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্ট খোলার সুবিধা হলো, এতে কোনো লেনদেন সীমা নেই। অর্থাৎ, গ্রাহক ইচ্ছেমতো টাকা জমা এবং উত্তোলন করতে পারেন, এবং একাউন্টের মাধ্যমে যে কোনো পরিমাণ টাকা লেনদেন করা যায়, যেখানে অন্যান্য ব্যাংকগুলোতে কিছু লিমিটেশন থাকতে পারে।
কারেন্ট একাউন্ট সাধারণত ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এই একাউন্ট খোলার জন্য গ্রাহককে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।
কারেন্ট একাউন্ট খুলতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
১।গ্রাহকের ভোটার আইডি কার্ড / পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / জন্ম নিবন্ধন—রঙিন ফটোকপি।
২।গ্রাহকের সদ্য তোলা ২ কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
৩।নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের রঙিন ফটোকপি এবং ১ কপি রঙিন ছবি (যদি নমিনি থাকে)।
৪।ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট বা ই-টিন সার্টিফিকেট (ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে একাউন্ট হলে)।
৫।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাউন্ট খোলে)।
এই সমস্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহ এবং জমা দেওয়ার মাধ্যমে, আপনি ইসলামী ব্যাংকে কারেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন এবং কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়া নিয়মিত লেনদেন করতে পারবেন। আবেদন ফরম দেখুন- এখানে
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম ও দরকারি ডকুমেন্টস
ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খুলতে চাইলে, অন্যান্য একাউন্টের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস ও কাগজপত্র জমা দিতে হয়। যদি আপনি সেভিংস একাউন্ট খুলতে চান, তবে আপনাকে এবং আপনার নমিনিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য যে সকল ডকুমেন্টস লাগবে:
১। ২ কপি সদ্য তোলা রঙিন ছবি – এটি গ্রাহক এবং নমিনির জন্য মোট ৪ কপি (২ কপি গ্রাহক এবং ২ কপি নমিনির) ছবি থাকতে হবে।
২। ভোটার আইডি কার্ড / ড্রাইভিং লাইসেন্স / পাসপোর্ট / জন্ম নিবন্ধন – গ্রাহক এবং নমিনির পরিচয় যাচাই করার জন্য এই ডকুমেন্টগুলির একটি রঙিন ফটোকপি জমা দিতে হবে।
৩। ব্যবসায়িক সেভিংস একাউন্ট – যদি আপনি ব্যবসায়িক সেভিংস একাউন্ট খুলতে চান, তাহলে আপনাকে ই-টিন সার্টিফিকেট এবং ব্যবসার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসও জমা দিতে হবে।
সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা:
১।গ্রাহকের ২ কপি রঙিন ছবি।
২।নমিনির ২ কপি রঙিন ছবি।
৩।ভোটার আইডি কার্ড / পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি।
৪। ব্যবসায়িক একাউন্ট হলে: টিআইএন নম্বর এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক দলিল।
এই ডকুমেন্টগুলো জমা দিয়ে আপনি ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারবেন
স্টুডেন্ট ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করার নিয়ম ও সুবিধা
স্টুডেন্ট ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করার নিয়ম এবং এর সুবিধা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য উপকারী হতে পারে। ইসলামী ব্যাংক শিক্ষার্থীদের জন্য সুদবিহীন সেভিংস একাউন্ট (Student Account) চালু করার সুযোগ প্রদান করে, যা বিশেষভাবে তাদের আর্থিক লেনদেনের জন্য সহায়ক।
স্টুডেন্ট ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম:
১।গ্রাহকের ২ কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি: ছবি অবশ্যই সদ্য তোলা হতে হবে।
২।ভোটার আইডি কার্ড / পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / জন্ম নিবন্ধন: এই ডকুমেন্টগুলির মধ্যে যেকোনো একটি ফটোকপি প্রদান করতে হবে, যা গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করে।
৩। স্টুডেন্ট আইডি কার্ড: শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দিতে হবে, যা আপনার শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিশ্চিত করবে।
৪।অভিভাবকের পরিচয়পত্র: কিছু ব্যাংক অভিভাবকের (যেমন, পিতা বা মাতা) জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং ছবি দাবি করতে পারে।
৫।নমিনি (যদি থাকে): নমিনির ২ কপি ছবি এবং নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (যদি আপনি নমিনি রাখতে চান)।
৬।অথোরাইজড সিগনেচার: আপনার সিগনেচার (স্বাক্ষর) ব্যাংকের রেকর্ডে থাকতে হবে, যা একাউন্টে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে।
৭।ফর্ম পূরণ: ইসলামী ব্যাংক থেকে স্টুডেন্ট একাউন্টের জন্য নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হবে এবং সঠিকভাবে সাবমিট করতে হবে।
স্টুডেন্ট ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের সুবিধাসমূহ:
১। সুদবিহীন একাউন্ট: ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্টে কোন সুদ প্রদান না করলেও, এটি সম্পূর্ণ সুদবিহীন এবং ইসলামী শরীয়াহ অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ, সুদ থেকে মুক্ত একটি ব্যাংক একাউন্ট।
২। সহজ লেনদেন: ছাত্রদের জন্য সহজে টাকা জমা এবং উত্তোলনের সুবিধা থাকে। একাউন্টের মাধ্যমে তারা শিক্ষামূলক বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ সম্পন্ন করতে পারে।
৩। নগদ উত্তোলন সুবিধা: কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই ব্যাংক এটিএম কার্ড প্রদান করে, যা শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারেন যেকোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য।
৪। অনলাইন ব্যাংকিং: অনেক ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্টে অনলাইন সুবিধা দেয়, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে তাদের একাউন্ট পরিচালনা করতে পারেন।
৫।স্বল্প পরিমাণে জমার সুযোগ: শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি ভালো সুযোগ, কারণ তারা খুব কম পরিমাণ অর্থ দিয়ে একাউন্ট খুলতে পারেন এবং একাউন্টটি পরিচালনা করতে পারেন।
৬। ডেবিট কার্ড: বেশিরভাগ ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্টের সাথে একটি ডেবিট কার্ড প্রদান করে, যা গ্রাহকরা কেনাকাটা, অনলাইন লেনদেন এবং এটিএম বুথে টাকা উত্তোলন করতে ব্যবহার করতে পারেন।
৭। বিশেষ সুবিধা: অনেক ব্যাংক স্টুডেন্টদের জন্য বিশেষ সুবিধা যেমন ফ্রি বা কম চার্জে ব্যাংকিং সেবা, অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা, বা স্টুডেন্ট স্কলারশিপ বা পুরস্কার স্কিম প্রদান করে।
৯। মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা: অনেক ইসলামী ব্যাংক তাদের স্টুডেন্ট গ্রাহকদের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা (যেমন, Mobile Banking) প্রদান করে, যার মাধ্যমে সহজে টাকা স্থানান্তর, পেমেন্ট, এবং অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা
ইসলামী ব্যাংক একাউন্টে পাবেন অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা। বিশেষ করে স্টুডেন্ট ব্যাংক ও সেভিংস একাউন্টে দারুন সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও দেশের বৃহত্তম ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। যার ফলশ্রুতিতে দেশের যেকোন জায়গায় ইসলামী ব্যাংকের শাখা ও ATM বুথ পাবেন।
ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট করার প্রসেস অনেক সহজ। এই ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য সর্বনিম্ন মাত্র ১০০ টাকা প্রাথমিক ডিপোজিট করা প্রয়োজন। ও অন্যান্য ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য ৫০০ টাকা প্রাথমিক ডিপোজিট করা প্রয়োজন।
শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত এই ব্যাংকটি লেনদেনে দিচ্ছে দারুন সকল সুযোগ সুবিধা। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকের এটিএম কার্ড, ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড সহজেই নিতে পারবেন। জানতে পারেন ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা তোলার নিয়ম সম্পর্কে।
আরো পড়ুন-
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এনটিআরসিএর নিয়োগ পাওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পারস্পারিক বদলি আবেদন শুরু
এনটিআরসিএ’র ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি এক লক্ষেরও বেশি শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ আসছে